Sunday, 4 August 2019
ফয়েজ
আহমেদ ফয়েজ
(১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১১ - ২০ নভেম্বর
১৯৮৪) একজন বামপন্থী চিন্তাধারার বিপ্লবী উর্দু কবি ছিলেন। তিনি সর্ব ভারতীয়
প্রগতিশীল লেখক সংঘ প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। দু বার নোবেল মনোনয়ন, ১৯৬২ সালে লেনিন
শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। সাম্যবাদী এই কবি সাম্রাজ্যবাদ আর প্রতিক্রিয়াশীলতার
বিরুদ্ধে লড়াই করে জেল, নির্বাসন বরণ করেছেন।
কবিতা
চলো আজ সমাগমে চলো
অশ্রুভরা এই চোখ, ঝঞ্ঝাতে পরিপূর্ণ এই জীবন যথেষ্ট নয়
কাতর প্রেমের ভিতরে জমাট বেঁধে যাওয়া অভিযোগও যথেষ্ট নয় আর,
এসো তবে আজ সমাগমে এসো
পা মেলাও,মেলাতে মেলাতে চলো হাটে ও বাজারে ,
চলো শিকলে আবদ্ধ মানুষের সাথে তাদের অলংকারে,
নৃত্যের শোভায় চলো
চলো ধুলো মেখে, রক্তধারার মতো পোশাক পরে চলো এগিয়ে যাই
এসো আজ, চলো যাই আমরা প্রিয় শহরের কাছে, সকলেই
অপেক্ষারত আজ সেখানে
সেই নগর-শাসক, সেই বোবাদর্শক
সেই তির অভিযোগের পাথর বোঝাই সেই মনখারাপের সকাল
আর যা কিছু সেই সকল ব্যর্থতার যেসকল দিন আমরা
ছাড়া কে আর বন্ধু হবে তাদের,
এই প্রিয় শহরে কে আর নির্মল আছে বলতে পারো ?
নাহ কেউ নেই
জহ্লাদের হাতে আর অবশিষ্ট নেই কেউ
বাঁধো হৃৎস্পন্দন বাঁধো, ভাঙা ওই হৃদয়টাও বেঁধে
নিয়ে চলো
বন্ধুরা, চলো যাই আমরা মৃত্যুর কাছে, চলো আমরা
হৃদয় সাজাই
চলো আজ সমাগমে, চলো আমরা আজ খুন হতে যাই
চলো নিজেদের সাজাই, দেশকাল চলো আজ সমাগমে মুখরিত চলো
আরো কয়েকটা দিন
আরো কয়েকটা দিন বাকি, আরো কয়েকটা মুহূর্ত বাকি
কিছুটা কাল বাকি এই বদ্ধ কারাগারে
সময়ের অপেক্ষা থেকে যাবে, কান্না, কষ্ট,
ইত্যাদি কিছুদিন মানিয়ে নিতে হবে
আমাদের পূর্বপুরুষদের হাত যে ভুলে রাঙা, সেই
ভুল বয়ে নিয়ে যেতে হবে,
অথচ আমরা জানি এ ভুল আমাদের নয়
ক্রমশ মানসিক প্রতিবন্ধকতার দিকে এগোচ্ছি
আমরা, আমাদের শক্তি আজ শিকলবন্দী
আমরা শব্দহীন, অস্তায়মান সূর্যের মতো একবার
জ্বলে নিভে গিয়েছি,
সাহসিকতা আজো আমাদের উজ্জীবিত করে তোলে,
যেভাবে অস্তিত্ব ছিল আমাদের এককালে
আজ আমাদের অস্তিত্ব ভিখারীর ছিন্নবিচ্ছিন্ন
কাপড়েই আবদ্ধ
প্রতিনিয়ত ছিন্নভিন্ন হচ্ছে আমাদের দেহ নতুন
কোনো নির্মম আঘাতে, ছিন্নবিচ্ছিন হচ্ছে আমাদের পোষাকআশাক
আমরা জানি এই একনায়কতন্ত্রের অভিশাপ মুছে যাবে
একদিন , হয়তো তার স্থায়ীত্ব কিছু ঘন্টা মাত্র
বহু যুগ ধরে চলতে থাকা, অনাসৃষ্টির এই হাওয়া মরু
ঝড়ের মতো
আমাদের পথ আটকে রাখবে
এইভাবেই থেকে যেতে হবে কিন্তু আজন্ম নয়
এইভাবেই আত্মসমর্পণ করে যেতে হবে প্রতিটি
বাধার কাছে কিন্তু আজন্ম নয়
আমরা জানি বর্তমানের ধোঁয়াশা পারিপার্শ্বিক
সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়
আমাদের যৌবনের প্রতিটি নতুন দিক অবরুদ্ধ করে
রাখে
রুপালি রাত্রিকে ফালা ফালা করে কেটে ফেলে, দেয়
যন্ত্রণা যা সারে না কখনো
হৃদয়ের যন্ত্রণা সারেনা, শরীর জুড়ে চলতে থাকা
কান্না থামেনা
কয়েকটা দিন প্রিয়, আরো কয়েকটা দিন বাকী এই
বদ্ধ কারাগারে
কোথাও কোন চিহ্ন নেই খুনের
কোথাও কোনো চিহ্ন নেই,
নাহ কোথাও
কোনো চিহ্ন নেই খুনের
নেই কোনো রক্তের দাগ
আততায়ীর হাতে
অথবা নখের কোনায় কোথাও নেই
জামার হাতায় হোক কিংবা দেওয়ালে
অথবা ছোরায় কিংবা বেয়নেটের মাথায়
চিহ্ন নেই,
কোথাও কোনো চিহ্ন নেই খুনের।
এই অদৃশ্য খুন ঝরেনি কোন রাজার খাতিরে
তার বদান্যতার
প্রতিদান স্বরূপ, অথবা কোনো ধর্মীয় উৎসর্গ ছিল না
পারমার্থিক মুক্তির প্রত্যাশায় হোক কিংবা যুদ্ধক্ষেত্রে
এই খুন ঝরেনি, খ্যাতির আশায়
উদযাপন হয়নি এইসব কোনো ব্যানারের হরফে।
আব্বা-আম্মা খুনের এই রক্তাক্ত চিৎকার
শোনা গিয়েছে, চিৎকার করেছে
ন্যায়বিচারের জন্য
যদিও কারোর কখনো সময় হয়নি এই আর্তনাদ শোনার।
নাহ, কোনো সাক্ষী ছিল না, ছিল না কোন প্রত্যক্ষদর্শী;
অভিযুক্ত হয়নি কেউই,
এই রক্ত তাদেরই যারা ধুলোয় ঘর বেঁধেছিল একদিন
অন্তিমকালে ধুলির তরেই এই খুন মিশে গিয়েছে
ধুলোয়।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment